ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১, নভেম্বর ২০২৪ ১৭:২৫:৫৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
রাজধানীতে আজও অটোরিকশা চালকদের সড়ক অবরোধ আজ ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নামল ১৪ ডিগ্রিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের সুযোগ কাজে লাগাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সরকার সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা

স্থূলতা বা ওবেসিটি থেকে মুক্তির উপায় 

লাইফস্টাইল ডেস্ক  | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৪৮ এএম, ১ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

স্থূলতা বা ওবেসিটি হলো এমন একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়, যা স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশ্বব্যাপী এই সমস্যা ক্রমবর্ধমান, এবং এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। এই প্রতিবেদনটি স্থূলতার কারণ এবং এর সমাধান নিয়ে আলোচনা করবে।

স্থূলতার কারণ

স্থূলতার প্রধান কারণ হলো শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি সঞ্চিত হওয়া, যা ব্যবহারের চেয়ে বেশি খাওয়া হয়। তবে এটির পেছনে আরও কিছু নির্দিষ্ট কারণ থাকতে পারে:

খাদ্যাভ্যাস: স্থূলতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, চর্বিজাতীয় খাবার, উচ্চ-ক্যালোরি খাবার, এবং মিষ্টিজাতীয় খাদ্য বেশি খাওয়ার ফলে শরীরে চর্বি জমে, যা ওজন বাড়ায়।

শারীরিক কার্যকলাপের অভাব: অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করার পর পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করলে শরীর সেই ক্যালোরি সঞ্চয় করে চর্বি হিসেবে জমা করে। আজকের আধুনিক জীবনযাত্রায় দীর্ঘসময় বসে থাকা বা কম শারীরিক শ্রম করার ফলে স্থূলতা বাড়তে থাকে।

জিনগত কারণ: বংশগত কারণে কিছু মানুষের শরীরে সহজেই চর্বি জমে। জেনেটিক উপাদান তাদের মেটাবলিজম ধীর করে দেয়, ফলে তারা সহজে ওজন কমাতে পারেন না। তাদের শরীরে চর্বি বেশি সঞ্চিত হয় এবং স্থূলতা দেখা দেয়।

হরমোনজনিত সমস্যা: কিছু হরমোনজনিত রোগ, যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS), ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। এই অবস্থায় শরীরের হরমোন ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়, যা মেটাবলিজমের হারকে কমিয়ে দেয় এবং চর্বি জমা করে।

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: অনেক সময় মানসিক চাপ, হতাশা বা উদ্বেগজনিত কারণে মানুষ অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন, যা স্থূলতার দিকে নিয়ে যায়। মানসিক সমস্যা থেকে কিছু মানুষ অস্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে ঝোঁকে, যা স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ, যেমন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস বা স্টেরয়েড ওষুধ, স্থূলতার কারণ হতে পারে। এই ওষুধগুলি মেটাবলিজমকে ধীর করে দেয় এবং ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়, ফলে ওজন বাড়তে থাকে।

স্থূলতার প্রভাব

স্থূলতা কেবল ওজন বৃদ্ধি নয়, এটি শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারে। এর ফলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, আর্থ্রাইটিস, এবং শ্বাসকষ্টের মতো গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া, মানসিকভাবে হতাশা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, এবং সামাজিক জীবনযাপনেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।

স্থূলতা প্রতিরোধ ও সমাধানের উপায়

স্থূলতা প্রতিরোধ এবং এর সমাধানের জন্য কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, এবং জীবনধারার পরিবর্তন। কিছু মূল উপায় হলো:

সুষম খাদ্যাভ্যাস: স্থূলতা প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হলো সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা। চর্বিজাতীয় এবং মিষ্টিজাতীয় খাবার কমিয়ে প্রোটিন, সবজি, এবং ফলমূল বেশি খেতে হবে। ফাস্ট ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। খাদ্য তালিকায় শস্য, আঁশযুক্ত খাদ্য এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম: ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম করা জরুরি। হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, যোগব্যায়াম, এবং সাঁতার কাটা শরীরের চর্বি পোড়াতে সহায়ক। এতে শুধু ওজনই কমবে না, হৃদযন্ত্রও সুস্থ থাকবে।

জীবনধারার পরিবর্তন: স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অবলম্বন করা স্থূলতা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। যথেষ্ট ঘুম নিশ্চিত করা (প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা)। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে মেডিটেশন বা যোগব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলা। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং স্থূলতা সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা।

চিকিৎসা ও পরামর্শ: যদি স্থূলতা অত্যন্ত গুরুতর হয় এবং জীবনযাপনে সমস্যা সৃষ্টি করে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসা প্রয়োজনে ওজন কমানোর ওষুধ, হরমোন থেরাপি, বা ব্যারিয়াট্রিক সার্জারির মাধ্যমে করা হতে পারে। এছাড়া ডায়েটিশিয়ান বা পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি ব্যক্তিগত ডায়েট পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে।

মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা: মানসিক চাপ ও উদ্বেগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানসিক সুস্থতার দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। এজন্য মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করা এবং হতাশা বা চাপের কারণে অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

স্থূলতা একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা অবহেলা করা উচিত নয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, এবং জীবনধারার পরিবর্তনই স্থূলতা প্রতিরোধের মূল উপায়। স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে থাকলে কেবল শারীরিক সুস্থতা নয়, মানসিক সুস্থতাও বজায় থাকে, যা একটি সুন্দর এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনে সহায়ক।

সূত্র: জীবনস্টাইল